প্রকাশিত: Mon, Jan 22, 2024 9:48 AM
আপডেট: Sat, May 10, 2025 2:33 PM

[১]অযোধ্যা: যেভাবে সেজে উঠছে হিন্দু ভ্যাটিকান আজ উদ্বোধন করবেন নরেন্দ্র মোদি

 ইকবাল খান: [২] ভারতের অযোধ্যায় নতুন মন্দিরটির  প্রাঙ্গণটি ৭০ একর জুড়ে বিস্তৃত, মূল মন্দির রয়েছে ৭.২ একর জায়গা জুড়ে। মনোরম তিন তলা মন্দির গড়া হয়েছে গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে, নীচের দিকে রয়েছে কালো গ্রানাইট পাথর। প্রায় ৭০ হাজার স্কোয়ার ফুট জুড়ে ধবধবে সাদা মার্বেল পাথর পাতা হয়েছে। মার্বেল পাথরের বেদিতে বসানো হবে ৫১ ইঞ্চি উঁচু রামের মূর্তি।

[৩] বিবিসি জানায়, আপাতত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার (২২ জানুয়ারি) একতলার উদ্বোধন করবেন। এবছরের শেষ নাগাদ মন্দিরটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে দৈনিক দেড় লাখ ভক্ত হয়ত মন্দিরে দর্শন করতে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা বর্তমানের ভক্ত সংখ্যার প্রায় সাতগুণ।

[৪] হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের মন্দিরটি যেখানে তৈরি হয়েছে, সেটা ভারতের সবথেকে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানগুলির অন্যতম। ওখানেই একসময়ে ছিল ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি বাবরি মসজিদ।

[৫] বিবিসি বাংলা জানায়, রাম মন্দির ধ্বংস করে ওই মসজিদ গড়া হয়েছিল, এই দাবি তুলে উন্মত্ত হিন্দু জনতা ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভেঙ্গে দিয়েছিল। তারপরে সারা দেশে শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মারা গিয়েছিলেন প্রায় দুই হাজার মানুষ।

[৬] বহু বছর ধরে হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে যে জমি নিয়ে বিবাদ চলে আসছিল, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৯ সালে দেওয়া এক রায়ে তার মালিকানা হিন্দুদের দিয়ে দেয়। যদিও সর্বোচ্চ আদালত এটাও স্পষ্ট করে বলেছিল যে মসজিদ ধ্বংস করাটা ছিল "আইনের শাসনের জঘন্য লঙ্ঘন"।

[৭] মসজিদ বানানোর জন্য মুসলমানদের অযোধ্যাতেই অন্য একটি জমিও দেয় আদালত।

[৮] মোদি এমন একটা সময়ে এই মন্দিরের উদ্বোধন করতে চলেছেন, যখন লোকসভা ভোটের আর কয়েক মাস বাকি আছে। ওই নির্বাচনে তৃতীয় বার জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এই মন্দিরটি "জাতিকে এক করবে"। বর্ষীয়ান মন্ত্রী রাজনাথ সিং মনে করেন রামমন্দির "ভারতের সাংস্কৃতিক পুণর্জাগরণ ঘটাবে আর জাতীয় গর্ব ফিরিয়ে আনবে"।

[৯] সমালোচকরা অবশ্য বলছেন যে মন্দির উদ্বোধনের সময় বাছার ক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতি মানার থেকেও রাজনৈতিক কৌশলের ওপরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভোটের আগে হিন্দুত্ববাদের হাওয়া তুলতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে তারা মনে করেন। তাদের কথায়, ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উঠে এসেছিল এই মন্দিরের দাবি তুলেই।

[১০] শহরের ভোল বদলিয়ে দেওয়ার জন্য কয়েক হাজার কোটি ভারতীয় রুপির যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাটের সম্প্রসারণ, একটি ঝাঁ চকচকে নতুন বিমানবন্দর, একটি বিশাল রেলস্টেশন এবং একটি বহুতলীয় গাড়ি পার্কিং রয়েছে। এর জন্য তিন হাজারেরও বেশি বাড়ি, দোকান এবং "ধর্মীয় কাঠামো" সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। চারটি প্রধান রাস্তা প্রশস্ত করে ১৩ কিলোমিটার লম্বা 'রাম পথ' বানানোও এই সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত। সব বাড়িগুলিকে একই রকম হালকা হলুদ রঙ করা হয়েছে।

[১১] র?্যাডিসন এবং তাজের মতো হোটেল চেইনগুলি ছাড়াও আরও ৫০টি নতুন হোটেল আর হোমস্টে তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। বহু পুরণো অপরিচ্ছন্ন অতিথিশালাগুলিকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই জমির দাম ইতিমধ্যে তিনগুণ বেড়ে গেছে।

[১২] ‘অযোধ্যা: সিটি অফ ফেইথ, সিটি অফ ডিসকর্ড’ বইটির লেখক ভ্যালে সিং ২০১৬ সাল থেকে অযোধ্যায় যান। তিনি বলছেন, "আপনি জায়গাটি চিনতেই পারবেন না, এতটাই বদলিয়ে গেছে জায়গাটি। দেখে তো চমকিয়ে গেছি।"